আপনি কি আপনার ব্যবসার জন্য অনলাইন বিজ্ঞাপন দিতে চাচ্ছেন, কিন্তু বুঝতে পারছেন না গুগল অ্যাডস ভালো হবে না ফেসবুক অ্যাডস?
নতুন উদ্যোক্তা কিংবা অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী—আপনি যেই হন না কেন, ডিজিটাল বিজ্ঞাপন ছাড়া আজকের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সফলতা পাওয়া কঠিন। বাংলাদেশে অনলাইন মার্কেটিং ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হলেও, “Google Ads” আর “Facebook Ads” এর মধ্যে কোনটি বেশি কার্যকর? এই প্রশ্নটা বাংলাদেশের হাজারো উদ্যোক্তা, ই-কমার্স ব্যবসায়ী এবং মার্কেটার প্রতিদিনই করে থাকেন। আপনি যদি আপনার পণ্যের জন্য ক্রেতা খুঁজেন বা ব্র্যান্ড সচেতনতা বাড়াতে চান, তবে সঠিক বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম বেছে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আজকে আমরা এই দুই জনপ্রিয় বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম – গুগল অ্যাডস ও ফেসবুক অ্যাডসের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরব, যাতে আপনি আপনার ব্যবসার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

গুগল অ্যাডস কি?
আপনি কি এমন একজন ব্যবসায়ী, যিনি চান যখন কেউ গুগলে আপনার পণ্যের মতো কিছু খোঁজে, তখন যেন প্রথমেই আপনার ওয়েবসাইটটি দেখায়? ঠিক এ কাজটিই করে গুগল অ্যাডস। এটি গুগলের একটি পেইড বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড টার্গেট করে আপনার ব্যবসাকে সম্ভাব্য ক্রেতার সামনে তুলে ধরতে পারেন। এটি একটি intent-based প্ল্যাটফর্ম — অর্থাৎ, মানুষ যখন কিছু খোঁজে, তখন তাদের সামনে বিজ্ঞাপন আসে।
আরো পড়ুনঃ লোকাল এসইও কি এবং কেন এটা আপনার ব্যবসার জন্য জরুরি
উদাহরণ: কেউ যদি গুগলে সার্চ করে “ঢাকার সেরা কফি শপ”, তখন আপনি যদি গুগল অ্যাডস ব্যবহার করেন, আপনার কফি শপের বিজ্ঞাপন টপে দেখাতে পারবেন। গুগল অ্যাডস-এর এই ইনটেন্ট-ভিত্তিক টার্গেটিং আপনাকে সেইসব ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে, যারা ইতিমধ্যেই আপনার পণ্য বা পরিষেবা খুঁজছেন। ঠিক একারনেই এটিকে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলে।

ফেসবুক অ্যাডস কি?
বর্তমান ডিজিটাল যুগে ব্যবসায়িক সফলতা অনেকটাই নির্ভর করে অনলাইন মার্কেটিংয়ের উপর, আর সেখানেই ফেসবুক অ্যাডস হয়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী মাধ্যম। ফেসবুক অ্যাডস বা বিজ্ঞাপন হলো ফেসবুকের একটি পেইড মার্কেটিং টুল, যার মাধ্যমে আপনি আপনার নির্দিষ্ট পণ্যের বা সেবার বিজ্ঞাপন ক্রেতাদের সামনে পৌঁছে দিতে পারেন। ফেসবুক অ্যাডস হচ্ছে interest-based সোশ্যাল মিডিয়া বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম। এটি শুধু ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ নয়, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার, অডিয়েন্স নেটওয়ার্কেও আপনার বিজ্ঞাপন পৌঁছে দিতে পারে।
আপনি বয়স, লোকেশন, পেশা, আগ্রহ, এমনকি ব্যবহারকারীর অনলাইন আচরণ অনুযায়ীও টার্গেটিং করতে পারবেন। ফলে, আপনি খুব সহজেই আপনার ব্যবসার জন্য সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন কম খরচে এবং কার্যকর উপায়ে। বিশেষ করে বাংলাদেশের ছোট-বড় উদ্যোক্তাদের জন্য ফেসবুক অ্যাডস একটি সাশ্রয়ী এবং ফলপ্রসূ বিজ্ঞাপন মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
উদাহরণ: আপনি যদি ফ্যাশনের উপর ভিত্তি করে ব্যবসা করেন, তাহলে ফেসবুক আপনাকে সেইসব ব্যবহারকারীদের সামনে বিজ্ঞাপন দেখাতে সাহায্য করবে, যারা ফ্যাশন বা অনলাইন শপিংয়ে আগ্রহী।
গুগল অ্যাডস বনাম ফেসবুক অ্যাডস মূল পার্থক্য কি
ডিজিটাল মার্কেটিং দুনিয়ায় সফল হতে হলে শুধু ভালো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস থাকলেই হয় না — সঠিক দর্শকের কাছে সময়মতো পৌঁছাতে হয়। আর এই কাজটি সহজ করে গুগল অ্যাডস এবং ফেসবুক অ্যাডস। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কোনটি আপনার ব্যবসার জন্য উপযুক্ত?
চলুন দেখি, এই দুটি প্ল্যাটফর্মের মূল পার্থক্য কী, এবং কোন পরিস্থিতিতে কোনটি ব্যবহার করলে আপনার বিনিয়োগ থেকে সর্বোচ্চ রিটার্ন পাওয়া সম্ভব।
গুগল অ্যাডস: ইচ্ছা (Intent)-ভিত্তিক টার্গেটিং
গুগল অ্যাডস এমন ব্যবহারকারীদের টার্গেট করে, যারা ইতিমধ্যে কিছু খোঁজ করছেন — যেমন “কম দামে ভালো ল্যাপটপ” বা “ঢাকায় ভাল রেস্টুরেন্ট”। অর্থাৎ, তাদের মনোযোগ ইতোমধ্যেই নির্দিষ্ট একটি প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের দিকে আছে।
গুগল অ্যাডসের কিছু বড় সুবিধা:
- উচ্চ ইচ্ছা সম্পন্ন দর্শক: মানুষ গুগলে যা খোঁজে, তা কিনতে চায় বা সমাধান চায়।
- বিপুল রিচ: গুগল প্রতিদিন বিলিয়ন সংখ্যক সার্চ হ্যান্ডেল করে।
- ROI ট্র্যাকিং সহজ: কীওয়ার্ড, CPC, এবং কনভার্সন সহজে পরিমাপ করা যায়।
- Shopping & YouTube Ads: ভিজ্যুয়াল ফরম্যাটেও বিজ্ঞাপন দেওয়া সম্ভব।
কিছু দুর্বল দিক:
- প্রতিযোগিতা বেশি: বিশেষ করে জনপ্রিয় কীওয়ার্ডে বিডিং কষ্টকর।
- কর্মদক্ষতা জরুরি: ঠিকঠাক সেটআপ না করলে বাজেট খরচ হবে কিন্তু ফল পাবেন না।
- সীমিত ডেমোগ্রাফিক টার্গেটিং: আগ্রহ বা লাইফস্টাইল ভিত্তিক টার্গেট কম।
ফেসবুক অ্যাডস: আগ্রহ (Interest)-ভিত্তিক টার্গেটিং
ফেসবুক অ্যাডস মানুষকে টার্গেট করে তাদের আগ্রহ, আচরণ, বয়স, অবস্থান, এবং জীবনঘটনার ওপর ভিত্তি করে। ধরুন কেউ ফিটনেস পেইজে অ্যাকটিভ — তাকে আপনি জিম বা স্পোর্টস প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দেখাতে পারেন, যদিও সে তখন কিছু খোঁজে নি।
ফেসবুক অ্যাডসের সুবিধা:
- অত্যন্ত নিখুঁত টার্গেটিং: আগ্রহ, পেশা, হবি এমনকি লাইফ ইভেন্ট অনুযায়ী।
- ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট: ভিডিও, ক্যারোসেল, রিলস, স্টোরিজ – সব ফরম্যাটে।
- কম খরচে বেশি রিচ: তুলনামূলকভাবে সিপিসি কম।
- ব্র্যান্ড বিল্ডিংয়ের জন্য চমৎকার: আগ্রহ তৈরি করে, মানুষের মনে জায়গা করে নেয়।
কিছু দুর্বলতা:
- ইচ্ছা কম: ইউজার বিজ্ঞাপন দেখছেন, কিন্তু কিনতে প্রস্তুত নাও থাকতে পারেন।
- অ্যাড ফ্যাটিগ: বারবার একই অ্যাড দেখালে ইউজার বিরক্ত হয়।
- কনভার্সন ট্র্যাকিং সীমিত: জটিল বিক্রয় প্রক্রিয়ায় কখনও স্পষ্ট ROI বোঝা কঠিন হয়।
গুগল অ্যাডস বনাম ফেসবুক অ্যাডস: ৫ টি পার্থক্য যা আপনার জানা উচিত
বর্তমানে অনলাইন মার্কেটিং এর সবচেয়ে আলোচিত দুটি প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে গুগল অ্যাডস এবং ফেসবুক অ্যাডস। অনেক উদ্যোক্তা এবং ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এই দুটির মধ্যে কোনটি তাদের জন্য উপযুক্ত, তা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। সত্য কথা হলো, প্রতিটি প্ল্যাটফর্মেরই আলাদা শক্তি ও দুর্বলতা আছে।
১. ইন্টেন্ট বনাম ইন্টারেস্ট
গুগল অ্যাডস মূলত ইন্টেন্ট বেসড, অর্থাৎ যখন কেউ কিছু খোঁজে (যেমন: “সেরা মোবাইল ফোন”), তখন সে কিনতে বা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত থাকে। তাই গুগল অ্যাডস সেই মুহূর্তেই বিজ্ঞাপন দেখায়।
অন্যদিকে, ফেসবুক অ্যাডস ইন্টারেস্ট বেসড। ফেসবুক আপনার পছন্দ, আচরণ, বয়স, লোকেশন অনুযায়ী বিজ্ঞাপন দেখায়—even যদি আপনি নিজে কিছু না খুঁজেও থাকেন।
উদাহরণ: কেউ গুগলে লিখছে “ঢাকায় AC সার্ভিসিং”, তখন গুগল অ্যাডস তাকে সরাসরি আপনার সার্ভিস শো করবে।
কিন্তু ফেসবুক অ্যাডস দেখাবে এমন কাউকে, যে হয়তো এসি খুজেছে বা এই রিলেটেড পেইজ ফলো করে।
২. টার্গেটিং ক্ষমতা
ফেসবুক অ্যাডস-এর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর ডিপ অডিয়েন্স টার্গেটিং। আপনি বয়স, লিঙ্গ, চাকরি, আগ্রহ, এমনকি বিয়ের স্ট্যাটাস অনুযায়ীও টার্গেট করতে পারেন।
গুগল অ্যাডস মূলত কীওয়ার্ড ভিত্তিক। যদিও রিমার্কেটিং ও অডিয়েন্স টার্গেটিং আছে, তবে তা ফেসবুকের মতো গভীর নয়।
উপসংহার: ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরি করতে চাইলে ফেসবুক অ্যাডস অসাধারণ, কিন্তু যখন কেউ কিনতে প্রস্তুত তখন গুগল অ্যাডস সবচেয়ে কার্যকর।
৩. খরচ ও রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (ROI)
বাংলাদেশের অনেক নতুন ব্যবসায়ীরা প্রায়শই একট প্রশ্ন করেন, কোনটাতে খরচ কম?
ফেসবুক অ্যাডস তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং ছোট বাজেটেও অনেক অডিয়েন্সে পৌঁছানো যায়।
গুগল অ্যাডস-এ ক্লিক প্রতি খরচ বেশি হলেও, যেহেতু ইউজারদের কেনার আগ্রহ থাকে, তাই ROI ভালো হয়।
আপনার লক্ষ্য যদি শুধু ব্র্যান্ড এক্সপোজার হয়, ফেসবুক অ্যাডস উত্তম। কিন্তু যদি সেলস বাড়াতে চান, তাহলে গুগল অ্যাডসের দিকে নজর দিন।
৪. বিজ্ঞাপনের ফর্ম্যাট ও কনটেন্ট
ফেসবুক অ্যাডস ভিজ্যুয়ালি রিচ, ছবি, ভিডিও, ক্যারোসেল, রিল ইত্যাদি মাধ্যমে সহজেই চোখে পড়ে। এটা বেশি ইনফরমাল ও এনগেইজমেন্ট ফ্রেন্ডলি।
গুগল অ্যাডস বেশি টেক্সট বেসড এবং ইউজারের সার্চ ইন্টেন্টকে ফোকাস করে—“সেরা হেয়ার কেয়ার স্যালুন গুলশান” টাইপের সার্চে বিজ্ঞাপন দেখায়।
নোট: ফেসবুকে বিজ্ঞাপন যেন গল্প বলা, আর গুগলে বিজ্ঞাপন যেন সমাধান দেওয়া।
৫. রিমার্কেটিং সুবিধা
রিমার্কেটিং মানে হলো আপনার ওয়েবসাইটে এসে যে গ্রাহক না কিনে চলে গেছে বা অ্যাড টু কার্ট এ রেখেছে, তাকে আবার বিজ্ঞাপন দেখানো।
গুগল অ্যাডস এবং ফেসবুক অ্যাডস দুটোতেই রিমার্কেটিং করা যায়। তবে ফেসবুকের ডায়নামিক অ্যাডস ব্যবহার করে আপনি সেই প্রোডাক্টই আবার ইউজারকে দেখাতে পারেন, যা সে দেখেছিল। এই স্ট্রাটেজি বাংলাদেশে ই-কমার্স বিজনেসগুলোতে দারুণ কাজ করে—বিশেষ করে যারা অনলাইন শপ চালান।
কখন গুগল অ্যাডস ব্যবহার করবেন?
আজকের ডিজিটাল যুগে, ব্যবসায় সফল হতে হলে অনলাইন মার্কেটিং এখন অপরিহার্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, গুগল অ্যাডস ব্যবহার করা উচিত কখন?
অনেকেই এই প্ল্যাটফর্ম নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। তাই জেনে নেওয়া প্রয়োজন, কখন এবং কিসের জন্য গুগল অ্যাডস সেরা অপশন হতে পারে।
বাংলাদেশের মতো বাজারে, যেখানে প্রতিযোগিতা বাড়ছে, আপনার বিজ্ঞাপন যেন সঠিক সময়ে সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছায়, সেটাই সফলতার মূল চাবিকাঠি। গুগল অ্যাডস এই সুযোগটা দেয়।
১. যখন আপনার গ্রাহক সক্রিয়ভাবে খুঁজছেন
যদি আপনার ব্যবসার পণ্য বা সেবা এমন হয় যা গ্রাহক স্পষ্টভাবে সার্চ করে, যেমন “ঢাকায় বাসার মেরামত সার্ভিস” বা “সাশ্রয়ী দামে মোবাইল ফোন,” তাহলে গুগল অ্যাডস আপনার জন্য সঠিক হবে। কারণ, যখন কেউ গুগলে সার্চ করে, তাদের মানসিকতা থাকে ‘আমি এখনই এটা চাই’। সেক্ষেত্রে গুগল অ্যাডস আপনার ব্যবসাকে তাদের সামনে তুলে ধরবে।
২. যখন আপনি নির্দিষ্ট কিওয়ার্ড টার্গেট করতে চান
আপনি যদি এমন পণ্যের প্রচার করতে চান যেটার জন্য নির্দিষ্ট শব্দ বা বাক্যাংশ ব্যবহার হয়, তখন গুগল অ্যাডসের কিওয়ার্ড-বেসড টার্গেটিং খুব কার্যকর। যেমন, “কম দামের ল্যাপটপ” বা “ঢাকায় সেরা চাইনিজ রেস্টুরেন্ট” ইত্যাদি। আপনার বিজ্ঞাপন শুধু সেইসব মানুষের সামনে যাবে যারা সেসব শব্দ সার্চ করছেন।
৩. যখন আপনার ব্যবসার লোকাল উপস্থিতি দরকার
বাংলাদেশে অনেক ছোট ও মাঝারি ব্যবসা লোকাল কাস্টমারদের উপর নির্ভর করে। গুগল অ্যাডসের মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার শহর বা এলাকার নির্দিষ্ট লোকেদের কাছে পৌঁছাতে পারবেন। ধরুন, আপনার একটি পেট কেয়ার সেন্টার আছে ঢাকা দক্ষিণে, তখন শুধু ঢাকা দক্ষিণের মানুষদের জন্য বিজ্ঞাপন চালিয়ে আপনি বাজেট অপচয় থেকে বাঁচবেন।
৪. যখন আপনি সরাসরি বিক্রয় বা লিড সংগ্রহ করতে চান
গুগল অ্যাডস থেকে পাওয়া গ্রাহকরা সাধারণত অনেক বেশি কনভার্সন সম্ভাবনা রাখে, কারণ তারা আগ্রহী ও ক্রয় প্রক্রিয়ার মাঝামাঝি বা শেষ পর্যায়ে থাকে। তাই, যদি আপনি ই-কমার্স, সার্ভিস প্রোভাইডার বা পেশাদার ব্যবসা (যেমন আইনজীবী, ডাক্তার) হন, গুগল অ্যাডসের মাধ্যমে দ্রুত বিক্রয় বা লিড পেতে পারেন।
৫. যখন আপনি আপনার বিজ্ঞাপনের কার্যকারিতা পরিমাপ করতে চান
গুগল অ্যাডস প্ল্যাটফর্ম খুব বিস্তারিত রিপোর্ট দেয় – কতজন ক্লিক করেছে, কোন কিওয়ার্ড থেকে ট্রাফিক এসেছে, কতো লিড বা বিক্রয় হয়েছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে আপনি আপনার বিজ্ঞাপনকে আরও উন্নত ও সাশ্রয়ী করতে পারবেন।
কখন ফেসবুক অ্যাডস ব্যবহার করবেন?
বর্তমান ডিজিটাল মার্কেটিং বিশ্বে ব্যবসা বাড়ানোর অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার হলো ফেসবুক অ্যাডস। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা অসংখ্য, সঠিক সময়ে এবং সঠিক কৌশলে ফেসবুক অ্যাডস ব্যবহার করলে আপনি আপনার ব্যবসার ব্র্যান্ডিং, লিড সংগ্রহ ও বিক্রয় বৃদ্ধিতে অসাধারণ সাফল্য পেতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কখন ফেসবুক অ্যাডস ব্যবহার করবেন? আসুন সেটাই বিস্তারিতভাবে জানি।
১. যখন আপনার ব্র্যান্ড সচেতনতা তৈরি করতে চান
নতুন বা ছোট ব্যবসা কিংবা বাজারে নতুন পন্য নিয়ে আসতে চাচ্ছেন তাদের পণ্য বা সেবা নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে চান, তাদের জন্য ফেসবুক অ্যাডস খুবই কার্যকর। ফেসবুকের গ্রাহকগণ বিভিন্ন আগ্রহ, বয়স, অবস্থান এবং আচরণের ভিত্তিতে টার্গেট করা যায়। এর ফলে আপনি এমন মানুষদের কাছে আপনার পণ্য বা সার্ভিস পৌঁছাতে পারবেন যারা হয়তো এখনও আপনার ব্যবসার সম্পর্কে জানে না, কিন্তু তাদের আগ্রহ থাকতে পারে।
২. যখন আপনি নতুন সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে চান
ফেসবুক অ্যাডস আপনাকে সেই গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করে যারা আপনার পণ্য বা সেবা কিনতে এখনো প্রস্তুত নাও থাকতে পারেন, কিন্তু তাদের আগ্রহ এবং আচরণ দেখে আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে তারা আপনার সম্ভাব্য ক্রেতা হতে পারেন। যেমন, ফিটনেস পণ্য বিক্রি করলে ফিটনেস পেজ পছন্দ করা, স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছানো সম্ভব।
৩. যখন আপনার পণ্যের ভিজ্যুয়াল প্রভাব দরকার
বাংলাদেশে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ছবির মাধ্যমে অনেক বেশি আকৃষ্ট হন। ফেসবুক অ্যাডসের ভিডিও, ক্যারোসেল, এবং স্টোরি অ্যাড ফরম্যাটগুলো আপনার পণ্য বা সেবার ভিজ্যুয়াল উপস্থাপনাকে আরও প্রভাবশালী করে তোলে। তাই আপনার যদি পোশাক, খাদ্য, গ্যাজেট, অথবা লাইফস্টাইল পণ্য থাকে, ফেসবুক অ্যাডস আপনার পণ্যের সৌন্দর্য ও ইউনিক ফিচার তুলে ধরার জন্য আদর্শ।
৪. যখন আপনার বাজেট সীমিত এবং খরচ সাশ্রয়ী চান
অন্যান্য ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের তুলনায়, ফেসবুক অ্যাডস শুরু করার জন্য তুলনামূলক কম বাজেট লাগে। বাংলাদেশের ছোট ও মাঝারি ব্যবসাগুলো যারা বড় বাজেট ছাড়াই অনলাইনে মার্কেটিং করতে চান, তাদের জন্য ফেসবুক অ্যাডস খুবই কার্যকর এবং সাশ্রয়ী অপশন।
৫. যখন আপনি নির্দিষ্ট ডেমোগ্রাফিক বা আগ্রহভিত্তিক গ্রাহক টার্গেট করতে চান
বাংলাদেশের বাজারে বিভিন্ন বয়স, পেশা, আঞ্চলিক বৈচিত্র্য আছে। ফেসবুকের মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট শহর, লিঙ্গ, বয়স, আয়ের স্তর, এমনকি ব্যবহারকারীর জীবনযাত্রার ঘটনাগুলো (যেমন বিয়ে, চাকরি শুরু, নতুন সন্তান জন্ম) অনুসারে বিজ্ঞাপন দেখাতে পারেন। ফলে আপনার বিজ্ঞাপন সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছে যায়।
৬. যখন আপনি লিড জেনারেশন বা কমিউনিটি তৈরি করতে চান
ফেসবুকের প্ল্যাটফর্ম আপনাকে শুধুমাত্র বিক্রয় বাড়ানোর জন্য নয়, বরং গ্রাহকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যও সুযোগ দেয়। ফেসবুক পেজ, গ্রুপ, লাইভ ভিডিও এবং কন্টেন্ট শেয়ার করে আপনি আপনার ব্র্যান্ডের পাশে শক্তিশালী একটি কমিউনিটি গড়ে তুলতে পারেন, যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসার জন্য দারুণ সহায়ক।
৭. যখন আপনি রিমার্কেটিং করতে চান
ফেসবুকের মাধ্যমে যারা ইতিমধ্যে আপনার ওয়েবসাইট ভিজিট করেছে বা আগ্রহ দেখিয়েছে তাদেরকে পুনরায় টার্গেট করতে পারেন। এটি বাংলাদেশে খুবই কার্যকর কারণ অনেক সময় ব্যবহারকারীরা প্রথমবার সরাসরি কেনাকাটা করেন না, পরে পুনরায় বিজ্ঞাপন দেখে ক্রয় করতে আগ্রহী হন।
আরো পড়ুনঃ কেন শুধু ফেসবুক অ্যাড দিয়ে আপনার ব্যবসা বড় করা সম্ভব নয়
শেষ কথা হচ্ছে আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করলেই আপনি সঠিক বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্ম বেছে নিতে পারবেন। যদি আপনি নতুন কাস্টমার পেতে চান বা যারা ইতিমধ্যে খোঁজ করছে, তাহলে গুগল অ্যাডস সেরা। আর যদি ব্র্যান্ড পরিচিতি বাড়াতে চান বা ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করতে চান, ফেসবুক অ্যাডস হবে আদর্শ।